ছাতক সংবাদদাতা: সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকে আলোচনার শীর্ষে থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া হাসান। ছাতক থানায় যোগদান করে নিজেকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে উনার অবস্থান বুঝানোর চেষ্টা করলেও তার রয়েছে আওয়ামী লীগের দোসর ও থানা এলাকার শীর্ষ চোরাকারবারিদের সঙ্গে গভীর দহরম-মহরম। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের সঙ্গে ওসির এমন সম্পর্কের ঘটনায় এখন ছাতকে আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তেমনি কিছু ঘটনায় ঘুরেফিরে আলোচনায় এসেছেন ওসি।
জানা গেছে- চলতি মাসের (০৪ ডিসেম্বর) ছাতক থানায় সম্প্রীতি সভায় আওয়ামী লীগের এমপি মানিকের ঘনিষ্ঠজন আওয়ামিলীগ নেতা বাবুল রায়কে অতিথি করাসহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের একাধিক নেতাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যের সুযোগ দেন ওসি। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী।
থানার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে যেখানে সাংবাদিক সংগঠনের নেতাকর্মী সহ সংবাদকর্মীরা আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা তার বদলে উল্টো সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিশেষ অতিথি হিসেবে ওসি আমন্ত্রণ করায় দুঃখ প্রকাশ করেন ছাতক প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম। তিনি বলেন- থানার সংশ্লিষ্ট কেউ আমাকে আমন্ত্রণ কিংবা উক্ত আয়োজনের বিষয়ে অবগতও করেন নি। তবে থানায় এমন আয়োজন শেষে এবিষয়ে ছাতকের বিভিন্ন মহলে কানাঘুষা শুরু হয়।
এছাড়াও চলতি মাসের (২২ ডিসেম্বর) ছাতকের শীর্ষ চোরাকারবারি ও ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান কামরুলের গ্রামের বাড়ী লুবিয়ায় ওসিসহ থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। সেখানে কামরুজ্জামান কামরুলের নেতৃত্বে আগ থেকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা। উল্লেখ্য কামরুজ্জামান কামরুল ছাতকের শীর্ষ চোরাকারবারি হওয়ার সুবাধে তখনও সে বেশ কয়েকটি মামলার আসামি ছিলো বলে সুত্র জানায়। কিন্তু প্রকাশ্য একজন আসামিকে গ্রেফতার না করে উল্টো তার বসতবাড়ীতে খানাপিনা করে কামরুজ্জামান কামরুলসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে ওসির ঘন্টাব্যাপী গোপন বৈঠক চলে। আওয়ামী লীগ নেতাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোটা অংকের রফাদফায় স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপি ও বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের আইনী বেড়াজালে ঘায়েলের দায়িত্বও নেন ওসি গোলাম কিবরিয়া হাসান বলে বিশস্ত সুত্র তা নিশ্চিত করে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সরকারের পট পরিবর্তনের পর বিগত (০৩ সেপ্টেম্বর) সেনাবাহিনীর অভিযানে ছাতকে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার ভারতীয় হরেকরকম পণ্য ও চোরাই মোবাইলসহ একটি মোটরসাইকেল আটক করা হলে আটককৃত একটি মোবাইলে ছাতকের শীর্ষ চোরাকারবারি ও আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান কামরুলের ব্যবহৃত নাম্বারে একাধিকবার ফোন আসে বলে সুত্র নিশ্চিত করে।
তবে সেনাবাহিনী কামরুজ্জামান কামরুলকে আসামি করলেও ওসি বিশাল অংকের রফাদফায় তাকে রক্ষার কবজ হিসেবে অপচেষ্টা করছেন মর্মে থানা পুলিশের একটি সুত্র জানায়। তারই ধারাবাহিকতায় মামলার আসামি ও শীর্ষ এই চোরাকারবারিকে আটকের বদলে উল্টো তার বাড়ীতে দাওয়াত খেয়ে খোশামোদ করেন ওসি। সে ঘটনায় থানা এলাকা জুড়ে চলছে নানা গুঞ্জন।
ওসির অফিসে সময়ে-অসময়ে থানা এলাকার শীর্ষ চোরাকারবারি, মাদককারবারিসহ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের আনাগোনা চলে অনবরত। এদের মধ্যে ছাতকের সরকারি সম্পত্তির বিনষ্টকারী ও অবৈধভাবে শতকোটি টাকার বালু লুটপাটকারী ও এ উপজেলার বহুমাত্রিক অপরাধ রাজ্যের রাজা সুজন মিয়া ও এ উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি শামীম তালুকদারসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী। এরা এমপি মানিকসহ সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠজন বলে অভিযোগ ছাতকের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের।
ওসির অবৈধ আয়ের হাতিয়ার হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালনে সর্বদা নিয়োজিত রয়েছেন থানার এসআই সাত্তার এমনকি এসআই সাত্তার ওসির টাকার মেশিন বলে অভিযোগ করে সচেতন মহলের একাধিক ব্যক্তি বলেন- ছাতকে বহুমাত্রিক অপরাধে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে না পারলেও উল্টো এসআই সাত্তার মারফতে ওসি মোটা অংকের রফাদফায় উল্টো আমজনতাকে গ্রেফতারসহ নানামুখী হয়রানি করেন। ফলসরূপ ওসির ভয়ে আতঙ্কে রয়েছে আমজনতা।
ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া হাসানের সরকারি সেলফোনে যোগাযোগ করলে সবকিছু মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে তিনি জানান- তিনি বর্ণিত তারিখে যাননি তবে সে দিনের আগের দিন অথাৎ গত (২১ ডিসেম্বর) ওই গ্রামের একজন পুলিশে চাকুরী করেন সেই সুবাদে পুলিশ হয়ে আরেক পুলিশ সদস্যের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তবে আশেপাশে যদি কামরুলের বাড়ী থেকেও তাকে তা তিনি জানেন না।
এদিকে ছাতকের এ.এস.পি সার্কেল রনজয় মল্লিক সেলফোনে কামরুজ্জামান কামরুলের বাড়ীতে ওসিসহ অন্যান্য কয়েকজন পুলিশ সদস্য যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান- উনিও জানতেন না এটা তার বাড়ী তবে সে ছাতকের শীর্ষ চোরাকারবারি এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে মর্মেও তিনি নিশ্চিত করেন।
এছাড়াও কিছুদিন আগে তার ভারতীয় চোরাই পণ্যের চালান ধরিয়ে দিয়েছেন মর্মে সে সাংবাদিকদের হুমকি-ধামকিও প্রদান করে। এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় লিখিত দরখাস্তও দাখিল করেন ওই সাংবাদিক।
Leave a Reply